দৈনিক সমকাল ক্যানভাসে ভালোবাসা
সাদিয়া মুনমুন
অভিনয় কি শখ থেকে নেশায় পরিণত হয়েছে? এই প্রশ্ন শুনে উত্তর দেওয়া যায়, তা নিয়ে খানিকটা ভাবলেন আজম খান। তারপর হেসে বললেন, ‘আমি তো নিজে কখনও ভাবিনি, অভিনয়টা নেশায় পরিণত হয়েছে কি-না। ভালো লাগে এটা নিদ্র্বিধায় বলতে পারি। অবশ্য ভালো লাগার বিষয়ও অনেক। ছোটবেলায় বিতর্ক করতাম। নাটক, কবিতা আবৃত্তি ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। ব্যাংকিং, বিজনেস আর খেলার জগৎ নিয়ে টেলিভিশনে টকশো করেছি অনেক। গান গাওয়া শখ ছিল। কিন্তু গান শেখার সুযোগ পাইনি। এসবই ভালো লাগা থেকে করা।’ কিন্তু আপনার অভিনীত নাটক, টেলিছবির সংখ্যা হিসাব করলে তো এটাই মনে হয় যে, অভিনয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না। পেশাদার শিল্পী না হয়েও নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন। এতে ধরে নেওয়া যায় না অভিনয় নেশায় পরিণত হয়েছে? এবার আর ভাবার জন্য সময় নিলেন না, স্বীকার করলেন, ‘ঠিকই অনুমান করেছেন, অভিনয় নেশায় পরিণত হয়েছে। না হলে শত ব্যস্ততার মাঝেও নিয়মিত অভিনয় করা হয়ে উঠত না।’ আজম খানের এই স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে জানাতে চাইলাম, ‘পেশাদার শিল্পী হলে বাছবিচার করে কাজ করা কঠিন। সে ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয় কাজ আলাদা করে ভাবেন? এর উত্তরে আজম খান বলেন, ‘ক’টি কাজ করলাম, তার সংখ্যা আমার কাছে মুখ্য নয়। যে কাজ করছি, তার মান কেমন, সেগুলো দর্শক কীভাবে গ্রহণ করছেন, সেটাই আমার ভাবনার বিষয়। যে জন্য সব সময় কাজ করার ক্ষেত্রে গল্প ও নির্মাতার বিষয়কে গুরুত্ব দিই। অভিনয় সহজ কাজ নয়, তার প্রমাণ অনেক আগেই পেয়েছি। তাই বলে দমে যাইনি।
প্রতিনিয়ত পর্দায় নতুন করে নিজেকে উপস্থাপন করতে সব সময় চেষ্টা ছিল। আগামীতে এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ আজম খানের এ কথা যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই নাটক-টেলিছবিগুলোয়। চয়নিকা চৌধুরীর নাটক ‘ফিরে আসার গল্প’, ‘সে আকাশ ভালোবাসে’, ‘তাল পাতার পাখা’, ‘কালো চিঠি’, ‘পথের শেষে’, ‘গল্পটি ছোট’, ‘আসবে বলে’; পিন্টু সাহার ‘হৃদয়ে মম’, সাখাওয়াত মালিকের ‘রূপালী’ ছাড়াও ‘সবুজ মানুষ’, ‘এবং স্বপ্নের মৃত্যু’, ‘শেষের পরে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘ভালোবাসার কিছু রং’, ‘আরশী’, ‘তুমি আছো তাই’, ‘নীলাভ বিস্মরণ’, ‘প্রিয় নার্গিস’, ‘আগমনী গান’, ‘বলো তারে’, ‘কখনও এমন নির্জন দুপুর আসে’সহ প্রতিটি নাটক ও টেলিছবিতে নিজেকে ভিন্নরূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এতে বোঝা যায়, জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাতে নারাজ তিনি। কিন্তু এরপরও তার কাজের তালিকাটা একেবারে ছোট নয়।
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে একক ও ধারাবাহিক নাটক, টেলিছবি আর মিউজিক ভিডিও মিলিয়ে অর্ধশতাধিক কাজ করেছেন। এই অভিনেতার কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, অভিনয় পেশা নয়, তারপরও স্বল্প সময়ে এত কাজ কীভাবে করলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যার প্রতি ভালোবাসা থাকে, তার জন্য সব প্রতিকূলতা জয় করা যায়। অভিনয়ের প্রতি আমার ভালোবাসাও এমনই। অফিস শেষ করে শুটিংয়ের জন্য ছুটে গেছি দেশের নানা প্রান্তে। আবার শুটিং শেষে রাতেই ফিরে পরদিন অফিস করেছি। একটাই কারণ, অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জয় করা। তা করতে পারলেই শিল্পী জীবন সার্থক।’
দৈনিক সমকাল, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮
Published on: Thursday, 10 January 2019, 03:30 am ▪ Last update: Sunday, 13 January 2019, 04:08 am ▪ Total View of this Page: 1017