দৈনিক ইত্তেফাক অভিনয়ের মানুষ
ছোটপর্দায় বহু সফল গল্পের অভিনেতা তিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অভিনয় করছেন নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। তিনি হলেন হালের ব্যস্ততম অভিনেতা আজম খান। তাকে নিয়ে লিখেছেন অজেয় চৌধুরী
ছোটবেলায় বিতর্ক করতেন। নাটক, কবিতা আবৃত্তি আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন অনেক। ব্যাংকিং, বিজনেস আর খেলার জগত্ নিয়ে টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিয়েছেন। গান গাওয়ার শখ ছিল। কিন্তু গান শেখার সুযোগ পাননি। অভিনয়ের শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটিএন বাংলার অফিসে শিল্পী চন্দন সিনহাকে আমার এই শখের কথা বলার পরে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন এই সময়ের একজন জনপ্রিয় নির্মাতার সঙ্গে। তিনি একজন দারুণ কাজপাগল মানুষ। তার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তার অনুপ্রেরণা আর উত্সাহ আমাকে এগিয়ে যেতে আশাবাদী করেছে। অনেক বড় কিছু কাজ করার পরিকল্পনা তার আমাকে নিয়ে। তিনি সত্যিই একজন গুণী নির্মাতা, অনেক আবেগপ্রবণ আর মায়াবতী একজন মানুষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাহফুজ আহমেদ, এফ কিউ পিটার, ফরহাদ ফয়সাল, বি ইউ শুভ, পিনটু সাহা, সাখাওয়াত মানিক আর প্রজ্ঞা নীহারিকা। তাদের পরিচালনাতেও আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ছুটির দিনে আর সন্ধ্যার পর কাজগুলো করেছি আমি। এমনও হয়েছে অফিস শেষে নিজের গাড়িতে লং ড্রাইভ করে ফরিদপুর আর বগুড়ায় গিয়েছি শুটিং করতে। আবার শুটিং শেষে মধ্য রাতে বাসায় ফিরে পরের দিন অফিস করেছি। আমি ভাগ্যবান। অনেক গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি আমি। আশির দশক থেকে এই সময়ের জনপ্রিয় অনেকের সহশিল্পী হয়েছি আমি। শুরু করেছিলাম শক্তিমান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে। তারপর একে একে কাজ করেছি আফজাল হোসেন, তৌকীর আহমেদ, শমী কায়সার, মাহফুজ আহমেদ, আফসানা মিমি, আজাদ আবুল কালাম পাভেল, পূর্ণিমা, তিশা, তানভীন সুইটি, বন্যা মির্জা, আনিসুর রহমান মিলন, শাহেদ শরীফ খান, মনির খান শিমুল, সজলসহ কমবেশি সবার সঙ্গেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আরও কাজ করেছি গুণী শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, শর্মিলী আহমেদ, ডলি জহুর, অরুণা বিশ্বাস আর মুনীরা ইউসূফ মেমীর সঙ্গে। এছাড়া গুণী নির্মাতা তানিয়া আহমেদের নির্দেশনায় খন্দকার খায়েরের ক্যামেরায় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস আই টুটুলের একটি গানের মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি আমি। ক্যামেরার সামনে আর পিছনে এই সুন্দর মানুষগুলোর অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতা না পেলে হয়তো এতগুলো কাজ করা হতো না আমার। আরও দুই জনের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। অমিতাভ আহমেদ রানা আর সুব্রত মিত্র। এই দুইজন মানুষ বন্ধুর মতো আমাকে সহযোগিতা করেছে সবসময়।’ তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো ‘দ্য হিরো’, ‘স্বপ্নের দেশ’ (ধারাবাহিক), ‘শেষের পরে’, ‘ভালোবাসার কিছু রং’, ‘আরশী’, ‘তুমি আছ তাই’, ‘নীলাভ বিস্মরণ’, ‘প্রিয় নার্গিস’, ‘শুভ্রার ওয়ার্ডরোব’, ‘একি সোনার আলোয়’, ‘নতুন ভোরে দেখা’, ‘আগমনী গান’, ‘বলো তারে’, ‘কালোচিঠি’, ‘আসবে বলে’, ‘রুপালি’ (ঈদের বিশেষ ধারাবাহিক), ‘অচেনা ডানা’, ‘কি আছে সেই খামে’, ‘ও আমার ভালোবাসার দেশ’, ‘তৃতীয় অধ্যায়’, ‘হীরার আংটি’ ইত্যাদি।
অভিনয় প্রসঙ্গে আজম খান বলেন, ‘অভিনয় আমার শখ। অভিনয় আমার নেশা। কে কয়টি কাজ করল, এটা আসলে বড় কথা না। কাজগুলো কেমন মানের হলো সেটাই দেখার বিষয়। তারপরও বলতে হয় একজন শখের অভিনেতার জন্য দুই বছরে এক ঘণ্টার নাটক, টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক, অডিও ভিজ্যুয়াল আর মিউজিক ভিডিও মিলিয়ে এতগুলো কাজ করা আমার মতো মানুষের জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। মাঝে মাঝে যখন ভাবি খুব অবাক লাগে আমার।’ তিনি বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন বুলু, সুজন মেহমুদ, জুয়েল দাস আর আসাদুজ্জামান আসাদ এই চারজন মানুষের চোখ যেন ক্যামেরার লেন্স। যাদের চোখ দিয়ে এই শখের অভিনেতাকে আজ সবাই দেখছে। অভিনয় করতে এসে অনুভব করলাম অভিনয়টা আসলে সহজ না। অভিনয়শিল্পীরা অনেক পরিশ্রম করে এ কাজটি করে থাকেন। তাই তাদের সবাইকে আমি সম্মান করি। সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য হয়েছি আমি। এই জগতের মায়ায় আজ জড়িয়ে পড়েছি। অভিনয়জীবনটাকে আমি এখন খুব এনজয় করি। আমার প্রিয় একটা গান আছে। গানটি হলো-এত সুর আর এত গান, যদি কোনোদিন থেমে যায়। কেন জানি মনে হয়, আমার এই অভিনয়জীবন হয়তো আমাকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে সবার কাছে।’ দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
Published on: Thursday, 10 January 2019, 02:13 am ▪ Last update: Sunday, 13 January 2019, 04:13 am ▪ Total View of this Page: 1006